জন্মের পরে মাতৃদুগ্ধ পানে উপকারিতা
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নিকটতমজন হলো তার মা। অসহায় নবজাত শিশুর পক্ষে শক্ত খাবার চিবানো ও হজম করার ক্ষমতা থাকে না। সেই মময়ে মায়ের বুকে অনন্য সাধারণ আদর্শ তরল-খাদ্য দুধের সৃষ্টি হয়। মাতৃগর্ভে ভ্রুণ সঞ্চারিত হলে স্তন দুধ উৎপন্ন করার জন্য প্রস্তুত হয়।
কিন্তু সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পরযন্ত মায়ের বুকে দুধ আসেনা। স্তন প্রচুর মেদকোষ ও গ্রন্থিকোষ দিয়ে তৈরী।
গর্ভস্থ মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরণ হরমোন ক্ষরণের ফলে স্তনের দগ্ধক্ষরা কোষ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এরকম অনেকগুলো কোষ মিলে তৈরি হয় লবিউল। লবিউলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালিকা মিলে হয় বড় নালিকা। এগুলো এসে স্তনবৃন্তে মিলিত হয়। স্তনের লবিউল কোষে দুধ উৎপন্ন হয়। মায়ের বুকে দুধ উৎপাদনের জন্য যা প্রয়োজন তা হলো-
১। হরমোনের নি:সরণ ঠিকমতো হওয়া।
২। স্তনের গঠন ঠিক থাকা।
৩। মন প্রফুল্ল থাকা।
৪। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
=====মাতৃদুগ্ধ পানের সুফল=====
সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর পরই মায়ের স্তন থেকে নি:সৃত পুষ্টিকর তরল খাদ্যকে মাতৃদুগ্ধ বলে। এ দুগ্ধই শিশুর আদর্শ খাদ্য। এ দুধের কোন বিকল্প নেই।
মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা বহুবিধ। নবজাতকের জন্য এই দুধ পান যেমন অত্যাবশ্যক, তেমনি মায়েরও অনেক সুফল বয়ে আনে। নিচে পৃথক শিরোনামে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল।
শিশুর ক্ষেত্রে উপকারিতা
১। মাতৃস্তন নি:সৃত দুধ নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর, এবং সঠিক তাপমাত্রায় পাওয়া যায়।
২। শিশুদের ২ বছর বয়স পরযন্ত মাতৃদুগ্ধ সব পুষ্টি চাহিদা পূরণে সক্ষম।
৩। মায়ের দুধে কোন প্রকার রোগ জীবাণু থাকেনা।
৪। মাতৃদুগ্ধে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু বিরোধী পদার্থ বিদ্যমান।যেমন- মেক্রোফেজ, লিম্ফোসাইট,
ইমিউনোগ্লোবিন-এ, লাইসোজাইমস্, লেক্টোফেরিন ইত্যাদি যা ডায়রিয়া, শ্বসনতন্ত্রের রোগ,
অন্ত্রের রোগ, প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫। পূর্ণবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু উভয়ই মাতৃদুগ্ধ সহজে হজম করতে পারে।
৬। দুগ্ধ পানের জন্য শিশু যে চোষণ দেয় তা শিশুর চোয়াল ও দাঁত গঠনে সহায়তা করে।
৭। মাতৃদুগ্ধ শিশুর গ্লুকোজ ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।
৮। এ দুধ শিশুর অপুষ্টি দূর করে এবং শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করে।
৯। মাতৃদুগ্ধ শিশুর সঠিক দৈহিক বৃদ্ধি বজায় রাখে।
১০। মাতৃদুগ্ধে ট্যারিন নামক যে বিশেষ পদার্থ থাকে তা শিশুর মস্তিষ্ক কলা গঠনে সাহায্য করে।
১১। যেসব শিশু ২বছর যথাযথভাবে মাতৃদুগ্ধ পান করে তাদের এলার্জিসহ অন্যান্য রোগ সাধারণত কম হয়।
মায়ের ক্ষেত্রে উপকারিতা
১। মা শিশুর মধ্যে মানসিক সম্পর্ক স্থাপনে মাতৃদুগ্ধের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
২। সঠিক নিয়ম ও পরযাপ্ত দুগ্ধ দান মাকে স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে।
৩। দুগ্ধদান ডিম্বস্ফুটন প্রতিরোধ করে প্রাকৃতিক উপায়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪। শিশুকে দুধ পান করালে গর্ভবতী অবস্থায় জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ কমে যায় এবং সুন্দর দেহ সৌষ্ঠব গড়ে উঠে।
৫। দুগ্ধদান করলে অক্সিটোসিন হরমোন নি:সৃত হয়, যা জনন অঙ্গগুলোকে প্রাক-গর্ভবতী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। (প্রাবি তথ্য)
★★আপনাদের সুখী জীবনই আমাদের কাম্য।
বি এস-সি, এম এস-সি (রসায়ন)
ডি এইচ এম এস (ঢাকা)
Comments
Post a Comment